মিউচুয়াল ফান্ড বনাম রিয়েল এস্টেট: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য কোনটি ভাল?

স্টক ও বন্ড নাকি লোহা ও ইট দিয়ে তৈরি বাড়ি? বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতে জনপ্রিয় দুটি উপায়, অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ড বনাম রিয়েল এস্টেটের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ যুদ্ধের সূচনা করুন৷

বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদী যাত্রা শুরু করাতে উত্তেজনাপূর্ণ সুযোগ যেমন আসে, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ বিকল্পগুলিও আসে। আপনি কি মিউচুয়াল ফান্ডের সঙ্গে গতিশীল স্টক মার্কেট যাবেন, নাকি রিয়েল এস্টেটের মতো বাস্তব সম্পদ বেছে নেবেন? এই নিবন্ধটিতে প্রতিটি বিকল্পের ভাল ও মন্দ, উভয় দিকগুলিই গভীর ভাবে বিচার করা হয়েছে, এইগুলি থেকে পাওয়া রিটার্ন, এইগুলির লিকুইডিটি, ঝুঁকি এবং ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আপনার দ্রুত মনে করার জন্য আবারও জানানো হচ্ছে যে একটি মিউচুয়াল ফান্ড একত্রে লক্ষ লক্ষ খুচরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং তারপর একটি নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি অনুসারে সংগৃহীত সেই অর্থ বিনিয়োগ করে। এই স্ট্র্যাটেজিটি স্টক ও বন্ডের মতো সম্পদের শ্রেণীর মধ্যে, ব্যাঙ্কিং অথবা PSU-এর মতো কয়েকটি খাতে অথবা মার্কেট ক্যাপ, ইন্ডেক্স ইত্যাদির মতো অন্য কোনও কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। অন্যদিকে, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ মূলত জমি অথবা স্থাবর সম্পত্তি কেনার সঙ্গে জড়িত। এই জমি অথবা সম্পত্তি থেকে ভাড়া পাওয়া অথবা এর মূল্য বৃদ্ধি থেকে লাভ করা, অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমি ও বাড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়া।

এখন মৌলিক বিষয়গুলি আপনার জানা হয়ে গিয়েছে, তাই ইটের সঙ্গে ইট গেঁথে অথবা শেয়ার থেকে শেয়ারের মাধ্যমে আপনার সম্পদ সৃষ্টির গোপন কথা জানার জন্য প্রস্তুত হন!

মিউচুয়াল ফান্ডের মূল বৈশিষ্ট্য

  1. সংগৃহীত অর্থের বিনিয়োগ: আপনার অর্থ অন্যদের অর্থের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্টক, বন্ড অথবা অন্যান্য সম্পদের বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ হয়। এর জন্য এমনকি স্বল্প পরিমাণেও বিনিয়োগ করা যায়।
  2. পেশাদার ম্যানেজমেন্ট: অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজাররা গবেষণা করে বিনিয়োগ নির্বাচন করেন, ফলে আপনার সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হয়।
  3. বৈচিত্র্যকরণ: শুধুমাত্র একটি অ্যাসেটের উপর নির্ভর না করেআপনার বিনিয়োগএকাধিক জায়গায় ছড়িয়ে দিন, ঝুঁকি কমান।
  4. লিকুইডিটি: ফান্ডের মধ্যে সহজেই শেয়ার কেনা-বেচা করুন। স্বতন্ত্র স্টকের মালিকানার তুলনায় এতে নমনীয়তা বেশি থাকে।
  5. স্বচ্ছতা: নিয়মিত রিপোর্টের মাধ্যমে ফান্ড হোল্ডিং এবং কর্মক্ষমতা প্রকাশ করা হয়, ফলে আপনি জানতে পারেন।
  6. ফি: ফান্ডের রিটার্ন থেকে ম্যানেজমেন্ট ফি এবং খরচ কেটে নেওয়া হয়, ফলে কার্যক্ষমতা প্রভাবিত হয়।
  7. ঝুঁকি: মার্কেটের ওঠানামা ফান্ডের মূল্যের উপরে প্রভাব ফেলে, তাই বিনিয়োগ করার আগে আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা বুঝে নেবেন।
  8. বিভিন্ন বিকল্পের সুযোগ: বিনিয়োগের লক্ষ্য, ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা এবং সম্পদ শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ফান্ড থেকে নির্বাচন করুন।
  9. সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIPs): রুপি-কস্ট অ্যাভারেজ থেকে লাভ পাওয়ার জন্য নিয়মিত বিনিয়োগ করুন (এমনকি অল্প পরিমাণেও) এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ সৃষ্টি করুন।

SIP কি? এই বিষয়ে আরও পড়ুন

মিউচুয়াল ফান্ডগুলি রিটার্ন উৎপন্ন করার নিশ্চয়তা দেয় না এবং অতীতের কর্মক্ষমতা থেকে ভবিষ্যতের ফলাফল বোঝা যায় না। বিনিয়োগ করার আগে গবেষণা করুন এবং একজন আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করুন।

রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি

  1. স্পর্শ দ্বারা অনুভব করা: স্টক ও বন্ডের বিপরীতে, রিয়েল এস্টেট তার নিজস্ব মূল্য এবং মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনায় একটি ভৌত সম্পদ দেয়।
  2. আয় উৎপন্ন করা: সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে একটি স্থায়ী, নিষ্ক্রিয় ও নিয়মিত আয়ের সুযোগ দিতে পারে, একটি নির্ভরযোগ্য ক্যাশ ফ্লো তৈরি করে।
  3. মূলধনের মূল্য বৃদ্ধি: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে মূলধন উপরে লাভের সম্ভাবনা থাকে।
  4. লিভারেজ: যেহেতু রিয়েল এস্টেটের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম বিনিয়োগ সাধারণত খুব বেশি হয়, তাই বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই রিয়েল এস্টেট কেনার অর্থের জন্য ঋণের উপর নির্ভর করেন। তাই সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি এবং ঋণের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।
  5. উচ্চ খরচ: লেনদেন সংক্রান্ত ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় এবং সম্পত্তি কর লাভকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
  6. অকার্যকরতা: খোলাখুলিভাবে লেনদেন করা স্টকগুলির বিপরীতে, রিয়েল এস্টেটের সম্পদ বিক্রি করতে বেশি সময় লাগতে পারে, তাই এর বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদ প্রয়োজন হয়।
  7. অবস্থান নির্ভরতা: সম্পত্তির মূল্য সেটির অবস্থানের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তাই মার্কেট সম্বন্ধে ভালভাবে গবেষণা করা এবং যথাযথ পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।
  8. পরিচালনার তীব্রতা: সরাসরি মালিকানা থাকলে সক্রিয়ভাবে দেখাশোনার প্রয়োজন হয়। সম্পত্তিটি ভাড়া দেওয়া থাকলে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার প্রয়োজন হবে। মাঝে মাঝে যখন ভাড়াটিয়া থাকবে না তখনকার জন্য প্রস্তুত থাকতে।
  9. বৈচিত্র্যকরণের বিকল্প: রিয়েল এস্টেট আপনার পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনতে পারে, সম্ভাব্য সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে পারে।
  10. অপ্রত্যাশিত সমস্যা: ভারতে জমি নিয়ে ব্যবসা করায় প্রায়শই অবৈধ কার্যকলাপ, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, গুণ্ডামি, আইনি সমস্যা ইত্যাদি জড়িত থাকে। এইগুলি হল দীর্ঘমেয়াদী ও উচ্চ ঝুঁকি। এগুলির মোকাবিলা করা শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক মানুষের পক্ষেই সম্ভব।

রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগে অনন্য ঝুঁকি থাকে এবং এর জন্য গভীরভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। এতে বিনিয়োগ করার আগে আপনার আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকির সহনশীলতা এবং বিনিয়োগের দক্ষতা বিবেচনা করবেন। একজন রিয়েল এস্টেট পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রিয়েল এস্টেটের তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা

যদিও এই দুটিই বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, তবে রিয়েল এস্টেট মালিকানার তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ড কিছুটা বেশি সুবিধা দেয়:

  1. সহজলভ্যতা ও বৈচিত্র্যকরণ: একাধিক সম্পদ-সম্পন্ন ও পেশাদারভাবে পরিচালিত পোর্টফোলিওতে অল্প পরিমাণে বিনিয়োগ করে অবিলম্বে বৈচিত্র্য পাওয়া যায়। একটি রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি কিনে তা পাওয়া যায় না।
  2. লিকুইডিটি ও নমনীয়তা: রিয়েল এস্টেট বিক্রি করার জন্য অধিকাংশ সময়ে সংশ্লিষ্ট দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেই তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার যে কোনও সময়েই সহজে কেনা ও বেচা যায়, ফলে এটি অনেক বেশি নমনীয়।
  3. প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট: অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজাররা মার্কেটের জটিলতা বিচার-বিশ্লেষণ করতে তাদের দক্ষতার ব্যবহার করেন, ফলে আপনার সময় এবং গবেষণার প্রচেষ্টা বাঁচায়।
  4. ব্যবস্থাপনার ভার কম থাকে: ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত সমস্যা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সহ সরাসরি সম্পত্তির দেখাশোনা করার দায়িত্বগুলি এড়িয়ে চলুন।
  5. প্রবেশে বাধা কম থাকা: রিয়েল এস্টেট কেনার জন্য অগ্রিম ও তাৎক্ষণিক ব্যয় খুব বেশি হয়। সেই তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ডে অল্প পরিমাণে বিনিয়োগ করে শুরু করা যায়।
  6. স্বচ্ছতা ও সুবিধা: নিয়মিত রিপোর্ট পাওয়া এবং অনলাইনে দেখার মাধ্যমে আপনার বিনিয়োগ সম্পর্কে স্থিতি স্পষ্টভাবে জানতে পারবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তি লেনদেনের প্রকৃতিতে স্বচ্ছতার অভাব থাকে।
  7. বিস্তৃত পরিসরের সম্পদের সহজলভ্যতা:এমন বিভিন্ন শ্রেণীর সম্পদের (যেমন, আন্তর্জাতিক স্টক, পণ্য) অভিজ্ঞতা পান, যা ব্যক্তিগত রিয়েল এস্টেট কেনার মাধ্যমে সহজে পাওয়া যাবে না।
  8. সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট অপশনস: SIP-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত বিনিয়োগ করুন , রুপি কস্ট অ্যাভারেজ থেকে লাভবান হন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ সৃষ্টি করুন।
  9. লেনদেনের ব্যয় কম: ব্যয়বহুল ক্লোজিং কস্ট, রিয়েলটর ফি এবং সম্পত্তি কর এড়িয়ে চলুন, যে ব্যয়গুলি সাধারণত রিয়েল এস্টেট লেনদেনের ক্ষেত্রে হয়।
  10. ঝুঁকি কম: একাধিক সম্পদের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে বৈচিত্র্য থাকায় স্বতন্ত্র সম্পত্তির কার্যকারিতা এবং মার্কেটের ওঠানামার সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি হ্রাস করে।

মিউচুয়াল ফান্ডের তুলনায় রিয়েল এস্টেটের সুবিধাগুলি

মিউচুয়াল ফান্ড সুবিধা ও বৈচিত্র্য দেয় বটে, তবে রিয়েল এস্টেট নির্দিষ্ট কিছু বিনিয়োগকারীদের অনন্য সুবিধা দিয়ে থাকে:

  1. বাস্তব সম্পদ এবং মুদ্রাস্ফীতিকে বাধা দেওয়া: নিজস্ব মূল্য সহ একটি ভৌত সম্পদের মূল্য প্রায়শই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। ফলে এটি সম্পূর্ণরূপে কাগজ-ভিত্তিক বিনিয়োগের বিপরীতে স্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতিকে বাধা দেওয়ার কাজ করে।
  2. বসবাসের সুবিধা: আপনি যদি একটি আবাসিক সম্পত্তি কেনেন, তাহলে এটি আপনাকে আরামদায়ক জীবনযাপন, সমাজে আরও মর্যাদা এবং বাড়তি নিরাপত্তার অতিরিক্ত সুবিধাগুলি দিতে পারে। আবাসিক অথবা বাণিজ্যিক একটি বাড়ির মালিক মিউচুয়াল ফান্ডের একজন খুচরা বিনিয়োগকারীর চেয়ে বেশি প্রভাব এবং সম্মান পান।
  3. প্রত্যক্ষ আয় সৃষ্টি: ভাড়ার মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় আয় পান এবং একটি নির্ভরযোগ্য ক্যাশ ফ্লো তৈরি করুন, যা অনেক মিউচুয়াল ফান্ডের থাকে না।
  4. করের সুবিধা: অবচয় (মূল্য হ্রাস হওয়া), মেরামত এবং বন্ধকী সুদের জন্য কর কম হওয়ার সম্ভাবনার সুবিধা নিন। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের জন্য করের সুবিধা থাকে না।
  5. অধিক নিয়ন্ত্রণ ও কাস্টমাইজেশন: আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজন ও পছন্দগুলির জন্য অনন্যভাবে প্রস্তুত করতে সম্পত্তির প্রকার, স্থান এবং পরিচালনার বিষয়গুলি নির্ধারণ করুন, যা মিউচুয়াল ফান্ডের নির্দিষ্ট করা নীতিতে পাওয়া যায় না।
  6. দীর্ঘমেয়াদে মূল্য বৃদ্ধি: মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্নের গড়ের চেয়ে রিয়েল এস্টেটে মূলধনের উপরে লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  7. মার্কেটের অস্থিরতার মোকাবিলা করা: দেখা যায় যে স্টক মার্কেটের ওঠানামার সঙ্গেরিয়েল এস্টেটের প্রায়ই কোনও সম্পর্ক থাকে না। তাই অর্থনৈতিক মন্দার সময় রিয়েল এস্টেটে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  8. বাস্তব উত্তরাধিকার: মিউচুয়াল ফান্ড হোল্ডিং এর সহজে লিকুইডেট করার প্রকৃতির বিপরীতে রিয়েল এস্টেট ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাস্তব উত্তরাধিকার তৈরি করে।
  9. অর্জনের অনুভূতি: আপনার বিনিয়োগের সঙ্গে একটি বাস্তব সংযোগ তৈরি হয়। আপনি বাস্তব সম্পত্তির মালিকানা এবং পরিচালনার সন্তুষ্টি অনুভব করেন।

কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে তা আপনিকীভাবে নির্ধারণ করবেন?

রিয়েল এস্টেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে কোনটিতে বিনিয়োগ করবেন তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনার আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকির সহনশীলতা এবং বাঞ্ছিত মেয়াদকাল সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য এখানে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হল:

1. বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা:

  • রিয়েল এস্টেট: আপনার যদি বাসস্থানের প্রয়োজন হয় তাহলে একটি বাড়ি কেনা আদর্শ হতে পারে। আপনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইক্যুইটি পাবেন, বাড়ির মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে এবং করের সুবিধা পাবেন (বাড়িটির অবস্থানের উপর নির্ভর করে)। তবে অগ্রিম খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং লিকুইডিটি না থাকা হল উল্লেখযোগ্য ত্রুটি।
  • মিউচুয়াল ফান্ড: আবাসিক REIT-এ বিনিয়োগ করা সরাসরি মালিকানা ছাড়াই হাউজিং মার্কেটে আসার সুযোগ দেয়। এতে লিকুইডিটি ও বৈচিত্র্য থাকে এবং এটি পেশাদারভাবে পরিচালনা করা হয়। তবে এর থেকে রিটার্ন কম পাওয়া যেতে পারে এবং মালিকানা সংক্রান্ত করের সুবিধা নাও থাকতে পারে।

2. বৃহত্তর পরিকল্পনা:

  • রিয়েল এস্টেট: দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ সৃষ্টির জন্য একটি রেন্টাল পোর্টফোলিও তৈরি করলে তার থেকে নিষ্ক্রিয় আয় পাওয়া এবং মূলধন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে। আপনি যদি একটি কারখানা অথবা একটি বাণিজ্যিক স্থান নির্মাণ করেন, তাহলে রিয়েল এস্টেটে বিচক্ষণভাবে বিনিয়োগ করা জরুরি। তবে, এতে ঝুঁকিও থাকে। লিভারেজ রিটার্ন বাড়াতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি এবং ঋণের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
  • মিউচুয়াল ফান্ড: প্রবৃদ্ধি-ভিত্তিক ইক্যুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির সঙ্গে ভালভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। বৈচিত্র্যকরণের ফলে ঝুঁকি কমে যায় এবং পেশাদার ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তোলে। তবে রিটার্ন নির্ভর করবে মার্কেটের ওঠানামার উপরে।

3. সহজে বিনিয়োগ:

  • রিয়েল এস্টেট: ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মগুলি রিয়েল এস্টেটে আংশিক মালিকানা দেয়। এর জন্য স্বল্প পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় এবং পরিচালনার ভারও কম হয়। তবে মিউচুয়াল ফান্ডের চেয়ে এখানে উপযুক্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন বেশি হয়।
  • মিউচুয়াল ফান্ড: ইনডেক্স ফান্ড অথবা ETF-গুলিতে প্যাসিভ ম্যানেজমেন্ট থাকে এবং ফি কম থাকে। ফলে এগুলি হ্যান্ডস-অফ বিনিয়োগকারীদের জন্য আদর্শ হবে। এগুলিতে বৈচিত্র্য থাকায় ঝুঁকি কমিয়ে দেয় বটে, তবে রিটার্ন মাঝারি পরিমাণে হতে পারে।

4. রিটার্ন:

  • রিয়েল এস্টেট: ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় যে রিয়েল এস্টেটের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে এবং তার পাশাপাশি স্থিতিশীল রিটার্নও পাওয়া যায়। এছাড়া ভাড়া থেকেও অবিরলভাবে নিষ্ক্রিয় আয় পাওয়া যায়। তবে রিটার্ন ধীরে ধীরে পাওয়া যায় এবং তা সম্পত্তিটির অবস্থান এবং মার্কেটের স্থিতির উপরে নির্ভর করে।
  • মিউচুয়াল ফান্ড: রিটার্নের পরিবর্তন উল্লেখযোগ্যভাবেনির্ভর করেনির্বাচিত ফান্ডের ধরণ এবং ঝুঁকির প্রোফাইলের উপরে। ইক্যুইটি ফান্ডগুলি থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে এর সঙ্গে উচ্চ মাত্রার অস্থিরতাও থাকে। বন্ড এবং আয়-ভিত্তিক ফান্ডগুলি বেশি প্রবৃদ্ধির চেয়ে স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেয়।

মনে রাখবেন, “সঠিক” পছন্দ নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর। আপনার নিজস্ব চাহিদা এবং ঝুঁকির সহনশীলতার সঙ্গে আপনার বিনিয়োগের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হলে পেশাদার ব্যক্তিদের থেকে আর্থিক পরামর্শ চাওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করবেন।

আপনার বিবেচনার জন্য নিচে অতিরিক্ত কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে:

  1. আপনার বয়স এবং বিনিয়োগের মেয়াদকাল: অল্প বয়সী বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাব্য বেশি রিটার্ন পাওয়ার জন্য বেশি ঝুঁকি সহ্য করতে পারেন।
  2. আপনার কাছে থাকা মূলধন: মিউচুয়াল ফান্ডের তুলনায় রিয়েল এস্টেটে অধিকাংশ সময়েই উল্লেখযোগ্য বেশি পরিমাণ অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
  3. আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা: আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা যদি কম হয়, তাহলে স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেবেন এবং আয়-ভিত্তিক বিকল্পগুলি বিবেচনা করবেন।
  4. আপনার জড়িত থাকার বাঞ্ছিত স্তর: রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে পরিচালনার প্রয়োজন হয়, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ন্যূনতম প্রচেষ্টা হলেই হবে।

উপসংহার

আপনি যদি মিউচুয়াল ফান্ডে অথবা অন্যান্য স্টক মার্কেট বিনিয়োগ করতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে আজই অ্যাঞ্জেল ওয়ানে একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলুন !

FAQs

কোনটি বেশি রিটার্ন দেয়, মিউচুয়াল ফান্ড, নাকি রিয়েল এস্টেট?

উভয়েরই ভাল রিটার্ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা ভিন্ন প্রোফাইলের সঙ্গে। রিয়েল এস্টেট মূলধনের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থিতিশীল রিটার্ন দেয়, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডগুলির ক্ষেত্রে নির্বাচিত ধরণের উপর নির্ভর করে সম্ভাব্য বেশি রিটার্ন (এবং ঝুঁকি) থাকে।

কোন বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি, রিয়েল এস্টেট নাকি মিউচুয়াল ফান্ড?

সাধারণত স্টক মার্কেটের তুলনায় রিয়েল এস্টেটে অস্থিরতা কম বলে বিবেচনা করা হয়, তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে ঝুঁকি থাকতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে বৈচিত্র্য থাকে, একাধিক সম্পদে ঝুঁকি ছড়িয়ে পড়ে।

শুরু করার ব্যয় কোনটিতে বেশি, রিয়েল এস্টেট নাকি মিউচুয়াল ফান্ড?

রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, আর মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করতে আপনার অল্প পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়।

কোনটির পরিচালনা করতে কোনটির বেশি সময় প্রয়োজন, রিয়েল এস্টেট নাকি মিউচুয়াল ফান্ড?

রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে সক্রিয় পরিচালনার প্রয়োজন হয়, কিন্তু সঠিকভাবে মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেওয়ার পরে ন্যূনতম প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। বস্তুত, যদি আইনি সমস্যা জড়িত থাকে, তাহলে রিয়েল এস্টেটের পরিচালনা আরও সমস্যাযুক্ত হতে পারে।

কোনটি বেশি লিকুইড, মিউচুয়াল ফান্ড নাকি রিয়েল এস্টেট?

মিউচুয়াল ফান্ডগুলি সহজেই বেচাকেনা করা যায়। রিয়েল এস্টেট বিক্রি করতে সময় লাগতে পারে, ফলে এর লিকুইডিটি কম থাকে। তবে রিয়েল এস্টেটে কোন এক্সিট লোড নেই, কিন্তু কোনও কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের এক্সিট লোড এবং বিনিয়োগের ন্যূনতম মেয়াদ উভয়ই থাকতে পারে।